সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মামুদনগর গ্রামের খুনি, মাদক সম্রাট ও চুরির গডফাদার আবুল কালাম ও আকিরুল মিয়া গংদের প্রতিরোধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সামাজিক ঐক্যতা গড়ে তুলতে এলাকাবাসী সম্মিলিত সভার আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকালে মামুদনগর বাজার সংলগ্ন মাদক ও চুরির প্রতিরোধ কল্পে এলাকাবাসীর একাত্মতায় সভায় উপস্থিতগণ গণস্বাক্ষর প্রদান করে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। এই সভা পূর্বে সমগ্র এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে জানানো হয়।
মামুদনগর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মাওলানা আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- শঙ্কু শেখর চৌধুরী, জুনেদ মিয়া, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মাওলানা নূর মোহাম্মদ, মাসুদ আল কাউসার, জহিরুল ইসলাম, মোতালিব মিয়া, শফি মিয়া, আজমান মিয়া প্রমুখ।
চুরি হওয়া গাড়ির মালিকের ভাই জুনেদ মিয়া বলেন, ‘হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আবুল কালামের ছেলে আকিরুল মিয়া আমার ভাই শাহিদুলের মোটরসাইকেলটি কয়েকমাস পূর্বে চুরি করে হয়৷ খবর পেয়ে আমরা শায়েস্তাগঞ্জের সাবেক কমিশনারের মাধ্যমে আকিরুলসহ গাড়ি উদ্ধার করি। ওই এলাকার মানুষের সমন্বয়ে আকিরুলের বাবা আবুল কালাম নিজে উপস্থিত হয়ে মোটরসাইকেল চুরির দায়ে দুই দিনের মধ্যে সর্বমোট ৩লাখ ৪০হাজার টাকা পরিশোধ করবে বলে স্ট্যাম্পে স্বীকারোক্তি দেন। এই হচ্ছে স্ট্যাম্প ও তাদের স্বীকারোক্তির ভিডিও। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবুল কালাম এই টাকা পরিশোধ করেননি। অনেকের মাধ্যমে টাকা চাইতে গেলে উল্টো তারা আমাদের হুমকি দেয়। আপনারা জানেন কালাম ও তার ছেলেরা শাহিদুলের ভাইকে খুন করেছে। এই খুনের মামলা কোর্টে এখনও চলমান। আমি নিরুপায় হয়ে আপনাদের শরনাপন্ন হয়েছি। এদের মাদক ব্যবসা ও চুরির কারণে ধ্বংস হচ্ছে এলাকার মানুষ। আমি আপানদের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘আবুল কালাম ও তার ছেলে আকিরুল খুনি, মাদক ব্যবসায়ী ও চোরের গডফাদার। আবুল কালাম ছোট থেকেই চুরি করে আসছে। মনে হচ্ছে এদের কাছে আমরা অসহায়! সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যাচ্ছে শাহিদুলের হোন্ডা চোর আবুল কালাম ও তার ছেলে আকিরুল মিয়া। আকিরুলের বাড়িতে মাঝে মধ্যে কিছু অপরিচিত লোক এসে এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করত। তারা যেদিন এখান থেকে চলে যায় এরপরে এলাকার বিভিন্ন স্থানে চুরির ঘটনা শোনা যায়। এই এলাকার এবং আশপাশের আরো অনেক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। মসজিদের দান বাক্সের টাকা, ব্যাটারি, স্বর্ণ, আরো অনেক কিছু চুরি হয়েছে। শুধু চুরিই নয় মাদকের ব্যবসা করে আজ জিরো থেকে হিরো হয়েছে আবুল কালামের পরিবার। সে সর্বজনীন রাস্তা দখলে নিয়েছে, গুরুস্থানের মধ্যে আলাদা মাজার তৈরি করছে ক্ষমতার দাপটে। সবসময় মসজিদের পাশে খোলামেলা মাদক সেবন করে বেড়াচ্ছে এই চক্রটি। আবুল কালাম গংদের মাদকের ছোবলে গ্রাম তথা সমাজ এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে ধাবিত হচ্ছে। যদি এখনই তাদের মাদক এবং চুরির প্রতিরোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে আমরা শান্তিতে থাকতে পারব না।
শাল্লা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ আল কাউসার বলেন, ‘দিরাই কল্যাণী গ্রামে এর আগে আবুল কালামের ছেলের চুরির বিচার আমি নিজেও করছি। সে নিজে চুরির দায় স্বীকার করেছে। আমারও গাড়ি কিছু দিন আগে চুরি হইছে থানায় জিডি করছি। শুনেছি সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আকিরুল ও তার সহযোগীদের ধরতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন। তাকে ধরলে সব বেরিয়ে আসবে। অন্যায় যে করুক তাকে শাস্তির আওতায় এনে আমরা আমাদের এই এলাকাকে মুক্ত করতে চাই।’
সভার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে পেয়েছি স্বীকৃত চোর আকিরুল ও তার বাবা আবুল কালাম। আজকের বৈঠকে যেহেতু তারা নাই, সেহেতু আবুল কালামকে কয়েকজন গণ্যমান্য মানুষ সববিষয়ে অবগত করুন। সে নিজে উপস্থিত হয়ে আগামী সভায় তাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। আমাদের পরবর্তী সভায় আবুল কালামদের উপস্থিতির মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব। ঐ সিদ্ধান্তের জন্য আজকে সভার মুলতবি ঘোষনা করে উপস্থিত হাজারো মানুষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনুরোধ করেন।’
মোটরসাইকেল চুরির দায়ে অভিযুক্ত আকিরুলের বাবা আবুল কালাম চুরির দায় সরাসরি স্বীকার না করলেও, শাহিদুলের মোটরসাইকেল ১লাখ ৫হাজার টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, স্ট্যাম্পের স্বাক্ষর আমারই কিন্তু স্ট্যাম্পের লেখাগুলো জুনেদ মিথ্যা লিখেছে। আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে এলাকাবাসী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকদ্রব্য ও চুরি প্রতিরোধ করতে এবং এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকাবাসী সামাজিকভাবে যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এই ব্যপারে প্রসাশনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীর জন্য সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।’