স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা গেছে, তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ১০মে সন্ধ্যার পর বালাগঞ্জ বাজারস্থ ডাকবাংলোর রাস্তায় লয়লুছ ও তার ভাইদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। সিরিয়া গ্রামের কমিল মিয়ার ছেলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইউনুছ আলীর ভাই সুমন মিয়াসহ তার অন্যান্য ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা এই হামলা করেন। লয়লুছ ও তার ভাইয়েরা হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে দুই পক্ষের পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় সুমনসহ তার ভাইয়েরা পাশ্ববর্তী কাঁমারের দোকান থেকে দা, চাপাতি এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে লয়লুছ মিয়া, তার ভাই মানিক মিয়া, আশিক মিয়া ও মাহমদ মিয়ার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারত্মক জখম করেন। আহতদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট শহরে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে লয়লুছ মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মারা যান তিনি। লয়লুছ’র আরেক ভাই মাহমদ মিয়ার অবস্থাও শংঙ্কামুক্ত নয় বলে জানা গেছে।
ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ১০মে সন্ধ্যার আগে সুমন বালাগঞ্জ বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বালাগঞ্জগামী একটি বাসকে থামাতে হাত ইশারা করেন। বাসটি না থেমে বাসস্ট্যান্ডে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সুমন বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসের চালক ও হেলপারকে গালাগাল করে মারতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় ওই বাস স্ট্যান্ডের ম্যানেজার লয়লুছ মিয়ার ভাই মানিক মিয়া চালক-হেলপারের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করে সুমনের সাথে তর্কে জড়ান। সন্ধ্যার পর উভয়ই বালাগঞ্জ বাজারে চলে যান। সেখানেই আরেক দফা কথা কাটাকাটি হলে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওইদিন রাতে সুমনের চাচাতো ভাই শ্যামলের উপর হামলা করে জখম করা হয়েছে বলে সুমনের পক্ষের লোকজনের দাবি। তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, আহত সুমন ও শ্যামল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল ১২মে আছরের নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লয়লুছ’র দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। লয়লুছ’র বড় ভাই সাবেক ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আশিক মিয়া বলেন, সুমনসহ তার ভাই মামুন, ইউনুছ, তাদের চাচাতো ভাই শিমুল ও রপি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা করে আমাদেরকে কুপিয়েছে। হাত-পায়ের রগ কাটায় রক্তক্ষরণে আমার ভাই মারা গেছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ করার কারণে আজ আমার ভাইকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমার আরেক ভাইর অবস্থা খুবই আশংঙ্কাজনক। ভাইয়ের খুনিদের বিচার ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। লয়লুছ’র পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তার ভাই মানিক মিয়া ও তার ১ছেলে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। সুমনের পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রীয়ভাবে সম্পৃক্ত আছেন বলে জানা গেছে। লয়লুছ মিয়া তারা ৯ভাই, তার ২টি ছেলে রয়েছে।
এদিকে, রবিবার রাতে লয়লুছ মিয়া মারা যাওয়ার খবর আসার পরক্ষণেই সুমনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ৯৯৯-এ কল পেয়ে ওসমানীনগর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে । বালাগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন ভুঁইয়া, ওসি (তদন্ত) ফয়েজ আহমদসহ বালাগঞ্জ থানা ও ওসমানীনগর থানা পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সহায়তা করে। রাতে সেখানে পুলিশের টিম মোতায়েন ছিল। মধ্যরাতে দ্রুত সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন, সিলেটের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) আশরাফুজ্জামান, র্যাব-৯ ও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিমসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ উদ্দিন ভুইয়া বলেন, এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন