নিজস্ব প্রতিবেদক:: নগরীর উত্তর সুরমায় ঘাসিটুলার মোকাম বাজারে জুয়ারী জাকিরের বেপরোয়া প্রতারণা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা, অতিষ্ঠ স্থানীয়রা পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। এই ডেবিলকে আটক না করে সহযোগিতার অভিযোগ পুলিশের বিরোদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় দীর্ঘদিন থেকে নগরীর মোকামবাজার ঘাসিটুলা এলাকার বড়মসজিদের সামনে সুরমা নদীর পাড়ে জাকিরের জমজমাট জুয়ার প্রতারণা চলে আসলেও পুলিশের নীরব ভূমিকা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন আমরাও প্রতিদিন জাকিরের জুয়ার বোর্ডে জান্ডিমুন্ডু ও শিলং তীর জুয়া খেলছি। পুলিশ অভিযান দেয় কিনা জানতে চাইলে তারা এই প্রতিবেদককে বলেন পুলিশের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ডেবিল জাকির ও মামুন এর জুয়ার বেপরোয়া প্রতারণায় অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। তারা বলেন সপ্তাহে থানার নামে ১০ হাজার এবং ডিবির নামে ৮ হাজার টাকা বখরা নেয়া হয় তাহলে তারা কেনো অভিযান দিবে। টাকা কে নেয় জানতে চাইলে তারা বলেন পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত এবং কোতোয়ালী মডেল থানার ওসির কাছের মানুষ লোকমান টাকা নেয় তাই পুলিশ জুয়ার প্রতারণা বন্ধে কোন অভিযান দিতে চায়না। কোতোয়ালী মডেল থানার অধীনস্থ সকল জুয়ার বোর্ড থেকে সোর্স লোকমান ওসির নামে বখরা আদায় করে।স্থানীয়রা জুয়ার জমজমাট প্রতারণা বন্ধে যৌথবাহিনির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বিগত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতির কারণে পুলিশের কর্মতৎপরতা না থাকায় আবারও সিলেটের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে জুয়ার জমজমাট প্রতারণা। ফলে চিহ্নিত বিভিন্ন জুয়ার আস্তানা গুলোতে এখন জুয়ার মহোৎসব চলছে। এসব জুয়ায় নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া মানুষ টুকাই থেকে শুরু করে ছাত্র, যুবসমাজ, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, সিএনজি চালক,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বাসার কাজের ভুয়াও অতি লোভে বেশী টাকা পাওয়ার আশায় তাদের সারা দিনের আয় জুয়া খেলে প্রতারিত হচ্ছে। ফলে একদিকে সাধারণ মানুষ বাড়ীতে ফিরছে খালি হাতে, অন্যদিকে পরিবারে চলছে ঝগড়া বিবাদ ও মানসিক অশান্তি। পরিবারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে জুয়ায় প্রতারিতরা জড়িয়ে পরছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এখই যদি সম্মিলিতভাবে এসব জুয়া বন্ধ করা না যায় তাহলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আর যেখানে জুয়া চলে সেখানে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপতো রয়েছেই।
জুয়ার বিষয়ে জানতে জুয়াড়ীদের সাথে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদককে বলেন পুলিশ, ডিবি ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই চলে ব্যবসা। বিশেষ করে ওসি জুয়াড়ীদের শেল্টার দিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তিনি নিয়মিত প্রতিটি আস্তানা থেকে দৈনিক ও সাপ্তাহিক বখরা আদায় করছেন।
স্থানীয়রা এসব জুয়ার প্রতারণা, মাদক ব্যবসা বন্ধে থৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র তৎপরতা বাড়াতে মহানগর পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
সিলেট মহানগর এলাকার এসএমপির উত্তর সুরমার কোতোওয়ালী থানার আওতাধীন আরো বেশ কয়েকটি জুয়ার বোর্ড চলমান রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে :-
কানিশাইল কেয়াঘাট এবং কানিশাইল শামিমাবাদ খান সেন্টারের সামনে দুটি জুয়ার বোর্ড চলছে। এই দুটি বোর্ডের মালিক আলম নামের একব্যক্তি। এখানে শিলং তীর ও জান্ডুমুন্ডু নামক জুয়ার প্রতারণা চলে। এই দুই বোর্ড থেকে থানার নামে সপ্তাহিক বখরা আদায় করা হয়।
মনিকা সিনেমা হলের সামনে কলোনীর ভিতরে আনু নামের এক ব্যক্তির শীলং তীর জুয়ার বোর্ড চলমান আছে, সেখানে অবিরাম চলে জুয়ার জমজমাট আসর। এই জুয়ার বোর্ড থেকে থানার নামে সপ্তাহিক বখরা আদায় করা হয়। এছাড়া ডিউটি পুলিশকে দৈনিক ৩ শত টাকা দেওয়া হয়।
বাগবাড়ী ব্রিজের পাশে আরেকটি জুয়ার আস্তানা রয়েছে। সেই জুয়ার আস্তানার মালিক জুয়ারী শিমুল। এখানেও শিলং তীর ও জান্ডুমুন্ডু নামক জুয়ার প্রতারণা চলে। এই জুয়ার বোর্ড থেকে থানার নামে সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
ঘাসিটুলা মরাটিলা এলাকার মাদরাসার গলির মূখে আরেকটি জুয়ার আস্তানা রয়েছে। সেই জুয়ার বোর্ডের মালিক রাসেল নামের এক জুয়ারী। সেখানে শিলং তীর ও জান্ডুমুন্ডু নামক জুয়ার প্রতারণা চলে। এই জুয়ার বোর্ড থেকে থানার নামে সপ্তাহিক বখরা আদায় করা হয়।
এছাড়াও এখানে জসিম নামের এক ব্যক্তি ইয়াবার ডিলার। সে দেদারসে প্রকাশ্যে দিবালোকে মরণ নেশা ইয়াবা নামক মাদকের ব্যবসা করছে। সেই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দৈনিক ১০০০/ টাকা আদায় করা হচ্ছে থানার নামে।
কানিশাইল শামিমাবাদ খান সেন্টারের সামনে আরেকটি জুয়ার বোর্ড চলমান রয়েছে। সেই বোর্ডের মালিক আসাদ নামের এক জুয়ারী। এখানে শিলং তীর ও জান্ডুমুন্ডু নামক জুয়ার প্রতারণা চলে। এই জুয়ার বোর্ড থেকে থানার নামে বখরা আদায় করা হয়।
কুয়ারপাড় ভিতরের পয়েন্টে টিকরপাড়া গলিতে আরেকটি শীলং তীর জুয়ার বোর্ড চলমান রয়েছে। সেই বোর্ডের মালিক বাবর/ শামীম। সেখান থেকেও বখরা নেয় পুলিশ।
রিকাবীবাজার নুরী রেস্টুরেন্টের পাশের গলি রিক্সার গেরেজ চলে শীলং তীর নামক জুয়ার জমজমাট আসর। এখানেও সাপ্তাহিক হিসাবে টাকা নেওয়া হয়।
জুয়ারীদের কাছ থেকে বখরা নেওয়ার বিষয়ে জানতে লামাবাজার ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আলী'র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন জুয়া, ডেবিল এবং মাদকের ব্যপারে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। এখানে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। আর আমি একমাস হলো জয়েন্ট করেছি, একেবারে বন্ধ করতে পারিনি। তবে পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ সুবিধা নিলে খোঁজ নিয়ে তাহার বিরোদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি’র নীরবতার সুযোগে জুয়াড়ীরা তাদের অবৈধ অপতৎপরতা চালিয়ে যাবার সাহস পাচ্ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু সচেতন মহল মনে করেন এসব অপকর্ম বন্ধে জুয়ার বোর্ড ও জুয়াড়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ –যৌথবাহিনীর সাঁড়াশী অভিযান জরুরী।
উল্লেখ্য এর আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)র অভিযানে বিগত বছরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও উত্তর সুরমার সকল জুয়ার আস্তানায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে খেলার সামগ্রীসহ জুয়ারীদের গ্রেপ্তার করে একদিকে যেমন জুয়ারীদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছিলো, অন্যদিকে অবৈধ প্রতারণা বন্ধ করে দেয়। তাই মনোবল ও সাহস হারিয়ে তাদের অবৈধ জুয়া গুটিয়ে নেয়।