রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ডিবি। তারা ছিনতাই, ডাকাতি ছাড়াও জাল টাকার কারবারে জড়িত। চক্রটির সদস্যরা কোথাও ছিনতাই বা ডাকাতির জন্য গেলে অস্ত্র ব্যবহার করে। কাজের সময় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চক্রটির সদস্যদের একে অপরের সঙ্গে জেলখানায় পরিচয় ঘটে। সেখান থেকে বের হয়ে তারা চক্রটি গড়ে তোলে।
বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির যুগ্ম কশিমনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), সোহাগ হাসান (৩৪), জলিল মোল্লা (৫২) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। এ ঘটনায় লুণ্ঠিত অর্থ, বিদেশি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধার করেছে ডিবি।
সংবাদ সম্মেলনে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডিতে ১২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে। কিন্তু গ্রুপটি ভিন্ন। তারা লোকাল লোকজনকে কন্ট্রাক্ট করে, তাদের তারা টাকা দেয়। একজন থাকে রুট পরিকল্পনাকারী। সেই ব্যক্তি স্থানীয় লোকজন ম্যানেজ করে দেয় তাদের। চক্রটির একে অপরের পরিচয় ঘটেছে জেলখানায়। তারা বিভিন্নজন বিভিন্ন অপরাধে জেলে গেলে সেখানে তারা পরিচিত হয় এবং তাদের মাঝে সখ্য গড়ে ওঠে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মিরপুরের মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ছাড়াও কয়েকটি গ্রুপ মিরপুরে এমন কাজ করে থাকে। তাদের লিংক ধরে বাকিদের ধরা হবে।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, ঘটনার দিন তারা একটি হায়েস মাইক্রোবাসে আসে এবং তারা সেই এলাকায় ঘুরে একটি স্থানে এসে দাঁড়ায়। সেই মাইক্রোবাস থেকে চারজনকে নামিয়ে দেওয়া হয় ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে। এ ঘটনার পর তারা পালিয়ে যায়। পরে সেই মাইক্রোবাসে আরও কয়েকজন ওঠে। এই তথ্যের সূত্র ধরে আমরা তদন্ত করে মাইক্রোাবাসটি শনাক্তের চেষ্টা করি। পরে বিআরটিএ এর মালিককে খুঁজে বের করে তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে তখন ভিডিও ফুজেট দেখে তাদের একজনকে চিনতে পারে এবং তার নাম বলে। এভাবে ক্লু পাওয়া গেছে।
নাসিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার মোস্তাফিজের কাছে জাল টাকা পাওয়া গেছে। আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি সে এই জাল টাকা কোথায় পেল।
ছিনতাই ও ডাকাতির কৌশল
তিনি জানান, চক্রটি সেই এলাকায় থাকা তাদের একজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে। মূলত সেই ব্যক্তি কখনো মোটা আবার কখনো পাতলা কালো ব্যাগ নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। বিষয়টি তাদের কাছে সন্দেহ হয় যে, সেটি টাকার ব্যাগ। এরপর তারা সেই এলাকা রেকি করে জানার চেষ্টা করে সেই এলাকায় কোন দিন মার্কেট বন্ধ থাকে। কারণ মার্কেট বন্ধ থাকলে লোকজন কম থাকবে। লোক সমাগম কখন কম হয়, কীভাবে ছিনতাই করে পালিয়ে যাবে সেটা ঠিক করে। এরপর ছিনতাই করে তারা।
সেদিন যা ঘটেছিল
ডিবি জানায়, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা থেকে বের হন। এসময় তারা একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লাখ টাকা ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (মিরপুর ১০ নম্বর) উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা করেন। পথে চারটি মোটরসাইকেলে সাত থেকে আটজন এসে তাদের পথরোধ করে। তাদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, জাহিদুল হক এবং তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী একজন ডাকাত পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করে এবং অপর একজন ডাকাত ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাত ডাকাতরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে উল্টো পথে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
মন্তব্য করুন