কালনী নদীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত সুনামগঞ্জের শাল্লার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারো পরিবার। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সরকারি স্কুল, রাস্তাঘাট, বাজার, ফসলি জমি। নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আরো অসংখ্য ঘরবাড়ি, বাজার। নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাস্তুহারা হবে অসংখ্য মানুষ। এমনই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে বিস্তীর্ণ জনপদসহ এলাকাবাসী।
কথা হয় ক্ষতিগ্রস্থ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। তারা জানান, প্রায় একযুগ ধরে মার্কুলি থেকে গ্রাম শাল্লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীর পাড় ভাঙ্গছে। এলাকার বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে হারিয়ে দিশেহারা। অনেকেই মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে বিভিন্ন যায়গায় কষ্টে জীবন যাপন করছে। সরকারি স্কুল, রাস্তাঘাট, ফয়জুল্লাপুর আদর্শ বাজার, প্রতাপুর বাজার আগেই গিয়েছে নদীগর্ভে। আরো কয়েকটা গ্রাম, ভেড়াডহর ও মেদা বাজার যেকোন মুহুর্তে বিলীন হতে পারে। ৮-১০ বছর আগে কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু এখন কত অফিসার, বড় মানুষ, এমপি মন্ত্রী আইয়া দেইক্কা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজের কোন দেখা নাই।
সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গন থেকে বাড়িঘর রক্ষার জন্য অনেকেই নদীর তীরে গাছ বাঁশ দিয়ে (আটকা) বাঁধ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে নিরাপদ স্থানে বসতি স্থাপনের।
অফিস সূত্রে জানা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর পাড় সংলগ্ম টুকচাঁনপুর, ফয়জুল্লাপুর, প্রতাপপুর, ভেড়াডহর, মেদাবাজার ও গ্রাম শাল্লা মোট ৬টি পয়েন্ট পার্মানেন্ট কাজ করতে ডিজাইন ইস্টিমিট সহ বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরন করা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কাজগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২৫ সালের মে মাসে ফয়জুল্লাপুর ১কোটি ৩২লাখ ও প্রতাপপুর ১ কোটি ৭৪ লাখ বরাদ্দের জন্য ইস্টিমিট সাবমিট করে টেন্ডারও পক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের কারণে টেন্ডার লাইভ বাতিল হয়ে যায়। তবে ইমার্জেন্সি কাজের জন্য আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হবে, যদি অনুমোদন হয় তাহলে অক্টোবর দিকে কাজ শুরু করা যাবে।
বাহাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য গনেন্দ্র দাস বলেন, ‘কালনী নদীর ভাঙ্গনে অসংখ্য ঘরবাড়ি জমি হারিয়ে মানুষ সর্বশান্ত। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেও ফলাফল কিছুই পাইনি। তাই নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে আমাদের অসহায় মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
ফয়জুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য উসমান গণি বলেন, ‘ফয়জুল্লাপুর শতাধিক বসতি, আদর্শ বাজার ও বহু ফসলি জমি অলরেডি ভেঙ্গে শেষ। বর্তমানে আরো কয়েকটা পাড়া ও বাজার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।’
বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘কয়েকবছর যাবত নদী ভাঙ্গনের ফলে সরকারি স্কুল সহ অসংখ্য বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। অতিদ্রুত কাজ না হলে আরো বহু পরিবার ভিটা উচ্ছেদ হবে।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শাল্লা শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী রিপন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা টেন্ডার লাইভ করেছিলাম কিন্তু গত মে মাসে বাতিল হয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আরো ঘরবাড়ি ও বাজার বিলূপ্ত হওয়ার পথে। স্থায়ীভাবে না হলেও আপদকালীন নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রস্তাবনা দিব, যাতে দ্রুততম সময়ের মাঝে কাজ করা যায়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা এডিজি স্যারকে বিষয়টা জানাইছি। ডিজাইন ইস্টিমিট সহ টেন্ডার করে বরাদ্দ চাইছিলাম কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এপ্রোভ করে নাই। যেহেতু বলেছেন, আমি স্যারের সাথে কথা বলে ইমার্জেন্সি কাজের ব্যবস্থা করব।’
মন্তব্য করুন